গাজাবাসীর স্বাধীনতা চান জার্মান চ্যান্সেলর

ফিরেছেন ৩ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম

গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে এসে তিন লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি ভূখ-টির উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। নিজ নিজ বাড়ির খোঁজে এলাকায় ফিরে আসা এসব লোকজনের ‘অপরিসীম’ সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গাজার উত্তরাঞ্চলে থাকা আল জাজিরার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, জোর করে বাস্তুচ্যুত করা তিন লাখের বেশি ফিলিস্তিনি প্রায় ১৫ মাস পর উত্তর গাজায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে খুঁজে দেখছেন কী অবশিষ্ট আছে। সোমবার থেকে ফিরতে শুরু করা এসব লোকজন ‘ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না’। ফিরে আসার পথে অন্তত দুইজন ডায়রিয়া ও তীব্র ক্লান্তি নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্যরা পরিবার পরিজন নিয়ে ফেরার পথে আছেন। সোমবার যে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরেছেন তারা তাদের ‘অনেক আপনজনকে খুঁজে পেয়ে খুশি’ হলেও ১৫ মাসের টানা যুদ্ধের পর উত্তর গাজার ইসরায়েলি চেকপোস্ট থেকে মালপত্রসহ সাত কিলোমিটার হেঁটে বাড়িতে ফেরার পর ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) কর্মকর্তা গ্লোরিয়া ল্যাজিক বলেছেন, ‘সেখানে কিছুটা আশঙ্কাও আছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস অবস্থায় পাবে।’ সোমবার স্থানীয় সময় সকাল থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তরাঞ্চলে তাদের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়ি ও এলাকায় ফিরতে শুরু করলেও তাদের মনোবল অটুট ছিল। পরিবারসহ গাজা সিটিতে ফিরতে থাকা রানিয়া মিকদাদ বলেন, ‘ফেরার মধ্য দিয়ে আমরাই বিজয়ী।’ স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে নিজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িতে ফিরে ইসমাইল আবু মাত্তার বলেন, ‘সেখানে একটা তাঁবুর চেয়ে এখানে একটা তাঁবু অনেক ভালো।’ ‘সেখানে’ বলতে তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলের বাস্তুচ্যুতদের যে আশ্রয় শিবিরে ইসরাইলি বাহিনী তাদের ঠেলে দিয়েছিল তার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। মাত্তার বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের পূর্বপুরষদের মতো আমরাও আর ফিরতে পারবো না।’ ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের গঠনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা দেখা দিয়েছিল তখন ইসরাইলিরা যেসব ফিলিস্তিনিকে তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের মধ্যে তার দাদা-নানাও ছিলেন। হুইল চেয়ারে বসে উত্তর গাজায় ফিরতে থাকা এক বৃদ্ধা আবেগে ১৯৪৮ সালের দিকের একটি ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি গান গেয়ে ওঠেন। মুখে হাসি নিয়ে তিনি সুরেলা কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘সবাই সবার পাশে দাঁড়াও, হে ফিলিস্তিনের জনগণ, সবাই সবার পাশে দাঁড়াও। ফিলিস্তিন গেছে, কিন্তু সে তোমাকে চূড়ান্ত বিদায় জানায়নি, হে ফিলিস্তিনের জনগণ।’
গাজাবাসীর স্বাধীনতা চান জার্মান চ্যান্সেলর : জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ মঙ্গলবার গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন। বার্লিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি সব পক্ষকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন, সব জিম্মিকে মুক্তি এবং ছিটমহলে আরও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখন গাজা উপত্যকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার উপযুক্ত সময়। ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্যও এটি জরুরি। সেইসঙ্গে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্যও অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, গাজার বাসিন্দাদের স্বাধীন ও সম্মানজনক জীবনের একটি রূপরেখা দরকার। জার্মানি এবং ইইউ এ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে প্রস্তুত। শলৎজ বলেন, বার্লিন এবং তার আন্তর্জাতিক অংশীদাররা গাজার দায়িত্ব গ্রহণকারী একটি সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করবে। সূত্র : আল-জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!
সিরিয়ায় সংবিধান বাতিল, সেনাবাহিনী ও আসাদের দল বিলুপ্ত ঘোষণা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সামরিক প্রস্তুতির পরিকল্পনা ইরানের বিপ্লবী গার্ডের
রাশিয়ার কাছ থেকে আবারো গ্যাস কেনার কথা ভাবছে ইইউ
গ্যাবার্ড-প্যাটেলের প্রার্থিতা নিশ্চিতকরণ শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্নের ঝড়
আরও

আরও পড়ুন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১ টাকা

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১ টাকা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় উত্তাল উত্তরা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় উত্তাল উত্তরা

গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!

গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ইয়ামিনের অসুস্থ  বাবার পাশে ইউএনও

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ইয়ামিনের অসুস্থ  বাবার পাশে ইউএনও

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা পুনর্গঠন সম্পন্ন

খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা পুনর্গঠন সম্পন্ন

দ্রত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নওগাঁর  গ্রামীণ গৃহবধূরা

দ্রত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নওগাঁর গ্রামীণ গৃহবধূরা

ভৈরবের সুমন মিয়া অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু

ভৈরবের সুমন মিয়া অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু

জনগণ আমাদেকে সুযোগ দিলে শাসক হবো না, চৌকিদার হবো : ড. ফারুকী

জনগণ আমাদেকে সুযোগ দিলে শাসক হবো না, চৌকিদার হবো : ড. ফারুকী

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন শাপুর জাদরান

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন শাপুর জাদরান

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবিতে টঙ্গীবাড়ি জাসাসের কর্মী সম্মেলন

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবিতে টঙ্গীবাড়ি জাসাসের কর্মী সম্মেলন

পাকিস্তানে ত্রিদেশিয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলে ডাফি

পাকিস্তানে ত্রিদেশিয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলে ডাফি

জুলাই গনহত্যার জড়িতদের বিচারের দাবিতে  সিলেটে ছাত্রশিবিরের 'গণমিছিল'

জুলাই গনহত্যার জড়িতদের বিচারের দাবিতে  সিলেটে ছাত্রশিবিরের 'গণমিছিল'

মতলবের মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

মতলবের মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহতঃ ইজতেমা ময়দানে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত

টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহতঃ ইজতেমা ময়দানে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত

নরসিংদীতে ২৫ জন মহিলা কোরআনের হাফেজাদের সংবর্ধনা

নরসিংদীতে ২৫ জন মহিলা কোরআনের হাফেজাদের সংবর্ধনা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় আন্দোলনে উত্তাল উত্তরা

গ্রাফিতি মুছে ফেলায় আন্দোলনে উত্তাল উত্তরা

প্লে অফে মুখোমুখি রিয়াল-সিটি

প্লে অফে মুখোমুখি রিয়াল-সিটি

সিলেটে গণসমাবেশ: সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি, নইলে কঠোর কর্মসূচি

সিলেটে গণসমাবেশ: সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি, নইলে কঠোর কর্মসূচি

লেবার কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে ১৫ সদস্যের মধ্যে সাত্তার-শাহেদ প্যানেলের  ১১টিতে জয়

লেবার কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে ১৫ সদস্যের মধ্যে সাত্তার-শাহেদ প্যানেলের ১১টিতে জয়

ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল

ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল